ফ্রিলান্সারদের বা প্রোগ্রামারদের স্বাস্থ্য সচেতনতা রিলেটেড ১২ টি টিপস

প্রোগ্রামারদের স্বাস্থ্য সচেতনতা রিলেটেড ১২ টি টিপস। 

১. চোখ 

এক টানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। ২০-২০-২০ রুল ফলো করতে পারো। ২০ মিনিট পরে, ২০ ফিট দুরুত্বে কোন কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় তাকিয়ে থাকবে। আমি সাধারণত দেড় দুই ঘন্টা বা মাঝে মধ্যে তিন ঘন্টা পর পর গিয়ে চোখে পানি দিয়ে আসি। মুখ ধুয়ে আসি। ফ্রেশও লাগে। চোখও কিছুটা বিশ্রাম পায়। মনিটর এর ব্রাইটনেস এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে ভালো একটা মনিটর কিনে নিতে পারো। অনেকে ল্যাপটপ এর কীবোর্ড এ টাইপ করে এতে মনিটর খুব কাছে থাকে। এবং আমার কাছে মনে হয় স্ক্রিন এসে চোখে লাগে। তাই আমি এক্সট্রানার কীবোর্ড এবং মাউস ইউজ করি যেন স্ক্রিন কিছুটা দূরে থাকে। এইটা ভালো কি খারাপ জানি না। তবে আমার ভালো লাগে। 

.

২. Carpal Tunnel Syndrome

প্রচুর টাইপ করতে করতে প্রোগ্রমারদের Carpal Tunnel Syndrome হয়। হাতের শক্তি কমে যায়। আঙুলে সমস্যা হয়। এইটা নিয়ে মাঝে মধ্যে ভয়ে থাকি। কাজ যা করি তা তো সব টাইপিং দিয়েই। এইটা বন্ধ হলে কি হবে? ভয়েস টাইপিং দিয়ে কি কাজ চলবে? নাকি ব্রেইনের নিউরন এর থিংকিং দিয়ে টাইপিং এর সিস্টেম এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে? 


Carpal Tunnel কমানোর জন্য আমি মাঝে মধ্যে বাম হাতে মাউস ইউজ করি আবার ডান হাতে ইউজ করি। মাঝে মধ্যে এক হাতে টাইপ করার চেষ্টা করি। একটু স্লো হয়। তাও চেষ্টা করি। কব্জি বা আঙুলের গোড়ায় ব্যাথা এর ফিলিংস আসলে ব্রেক নেই। মাসাজ করি। 

.

৩. ব্যাকপেইন 

অনেকেই দামি আর্গোনমিক চেয়ার ইউজ করে। আমি সিম্পল প্লাস্টিক এর (IKEA চেয়ার) ইউজ করি। যদিও এইটা করা উচিত না। তারপরেও ভালো লাগতেছে। একবার দুইবার গদিওয়ালা চেয়ার ইউজ করার ট্রাই করছিলাম। কেন জানি ভালো লাগে নাই। তাই আবার সিম্পল চেয়ার এ ব্যাক করেছি। সাধরনত কাঠের শক্ত চেয়ার আমার ভালো লাগে। ঘুমও পায় না 😃


একবার কোমর এবং ব্যাক সাপোর্ট এর জন্য ছোট একটা এক্সট্রা কুশন কিনছিলাম এমাজন থেকে। এইটা দিলে আরাম পাওয়া যায়। তবে কোন এক সময় বাসা পাল্টাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি সেটা আর কিনা হয়নি। 

.

৪. বসার স্টাইল (sitting posture)

পিঠ সোজা করে বসার চেষ্টা করি। মনিটর এঙ্গেল ঠিক রেখে বসার চেষ্টা করি। আগে রেগুলার টেবিল ইউজ করতাম। পরে একজন টিম মেম্বারের পরামর্শে ফেইসবুক মার্কেটপ্লেস থেকে একটা হাইট এডজাস্টেবল টেবিল কিনেছি ($১২০) দিয়ে। রোজার মাসে খুব কম দাঁড়িয়ে কাজ করি। অন্য সময় দেখা যায় ডেইলি ৩-৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে কাজ করি। আগে যখন হাইট এডজাস্ট করার টেবিল ছিল না। তখন ল্যাপটপ এর নিচে বই দিয়ে। কীবোর্ড এর নিচে বই দিয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতাম। চেইঞ্জ করতে জাস্ট এক মিনিট সময় লাগতো। এর বেশি কিছু না। 

.

৫. খাবার দাবার (Obesity / ওয়েট গেইন )

অনেক প্রোগ্রামার এর নড়াচড়া করে কম। সারাদিন বসেই থাকে কম্পিউটারের সামনে। এক্সারসাইজ এর বালাই নাই। সারাদিন যা পায় তাই খায়। ফলে ওয়েট গেইন করে ফেলে। এই ক্ষেত্রে আমি। তিনটা রুলস ফলো করার চেষ্টা করি। এক, রাতে ভাত খাই না। রুটি, পরোটা বা রোল টাইপের কিছু খাই। (কেউ দাওয়াত দিলে সেদিন মাফ) দুপুরে ভাত বা সালাত। সকালে নাস্তা। গরুর মাংস অনেক কম খাওয়ার চেষ্টা করি। খাবার অনটাইমে খাই। মানে দুপুর ১২.০০ হলেই লাঞ্চ। কোন মাফ নাই। রাতের খাবার সাধারণত ৬-৭টার মধ্যে খেয়ে ফেলি। (রাতে কিন্তু আর ক্ষিধা লাগে না।) 


ভাজাপোড়া, বার্গার, পিজ্জা, বিরানি অনেক কমিয়ে দিয়েছি। ইফতারও ভাঁজাপোড়া অনেক কমিয়ে দিয়েছি।  

.

৬. এক্সারসাইজ

জিম এ যাইতে আমার কাছে ভালো লাগে না। যেহেতু মাসল বিল্ড করার কোন ইচ্ছা বা অপশন নাই। তাছাড়া ট্রেডমিলও বোরিং লাগে। তাই আমার জন্য এক্সারসাইজ এর তিনটা পার্ট আছে। আমি চেষ্টা করি ডেইলি ১০হাজার স্টেপ নিতে। স্মার্ট ওয়াচ এ ট্রাক করি। বেশিরভাগ দিন এ ১০ হাজার স্টেপ হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে মিটিং করতে করতে হাটি। আর সপ্তাহে ৩ দিন দৌড়ানোর চেষ্টা করি। সাধারণত ৩-৫ মাইল দৌড়াই। আর মাঝে মধ্যে বা ঘুম পাইলে পুশআপ দিয়ে দেই। 


বাইরে দৌড়াতে আমার ভালো লাগে। দৌড়ানোর সময় আমি অনেক প্ল্যান/স্ট্রাটেজি নিয়ে চিন্তা করি। আমার অনেক স্ট্রাটেজি বা থিংকিং এ আসে দৌড়ের অংশ থেকে   

.

৭. মাথা ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা 

আমি পর্যাপ্ত পানি খেতে থাকি (পান করতে থাকি)। তারপরেও কোনদিন বেশি দৌড়ালে (সেদিন ঘাম বেশি হয়ে) এবং মাথা ধরে। যদিও খুব বেশি দৌড়লে-- হাফ ম্যারাথন টাইপের বা ১০ মাইল তখন গেটরেট টাইপের ভিটামিন ওয়াটার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করি। কারণ লবণ এবং মিনারেল শূন্যতা কমে যায়। তারপরেও দেখি সেদিন মাথা ধরে। এবং নরমাল দিনগুলোতে পর্যাপ্ত ঘুম আর পানি খাওয়ার জন্য মাথা ব্যাথা প্রব্লেম আমার কম হয়। এবং মনিটর এর হাইট লেভেল এডজাস্ট করার কারণে ঘাড় ব্যাথার প্রব্লেম বেশি হয় না। কদাচিৎ ঘুম বা বালিশের উল্টাপাল্টা হলে হয়। যেটা দুই একদিন এর মধ্যে সেরে যায়।  

.

৮. Imposter Syndrome

যদিও আমি অনেক দিন কাজ করার কারণে এইটা অনেক দিন ধরে আমার হয় না। তবে ফার্স্ট যখন চাকরিতে জয়েন করি। তখন এইটা ছিল। এই Imposter Syndrome হচ্ছে-- আমি হয়তো পারবো না। অন্য সবাই কত কত বড়। কত কিছু জানে। আমি কিছুই জানে না। এমন অনেক মনে হতো। আমার কপাল ভালো ছিল আমার একজন কলিগ খুব ভালো ভাবে আমাকে গাইড করেছিল। সেও যে জানে না অনেক কিছু সেটা শেয়ার করতো। আমি ধীরে ধীরে শেখানোর কাজে জড়িয়ে পড়ি। মিটআপ এ টক দেয়া শুরু করি। তারপর এই Imposter Syndrome চলে গেছে। 

.

৯. ঘুম 

একটা সময় ছিল রাত ১০.০০ বাজলেই লাইট অফ করে দিতাম আর ভোর ৫টায় উঠে যেতাম। এখন আর সেটা পসিবল হয় না। তবে মিনিমাম ৭ ঘন্টা ঘুম মেইনটেইন করার চেষ্টা করি। কোনদিন একটু কম হলে পরের দিন পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমি কখনোই দিনে ঘুমাই না। রাতে একবারে ঘুমাতে যায় (এখন সেহেরি এর জন্য একটু ব্রেক পড়ে) তারপরেও ৭ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করি 

.

১০. ক্যাফেইন (চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস/সোডা, এনার্জি ড্রিঙ্কস)

আমি গত এক যুগ ধরে চা-কফি খাই না। এক চুমুকও খাই নাই। কোল্ড ড্রিঙ্কস গত ৮-৯ বছর ধরে খাই না। এক চুমুকও না। আর এনার্জি ড্রিঙ্কসও না। সো, আমার ক্যাফেইন রিলেটেড সমস্যা নাই। কেউ কেউ কফি বা চা আসক্ত। না হলে চোখ খুলতেই পারে না। বা কেউ কেউ পরিমিত খাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি সেই লাইনে নাই। এমনকি কেউ কেউ বলে গ্রিন টি ভালো বলে তাদের কথা শুনি। কিন্তু খাই না। কেউ কেউ বলে পিজ্জা বা বিরানি খাইলে নাকি কোক লাগে। আমি তাদের সাথে তর্কে যাই না। তবে আমার কোক ছাড়া ভালোই চলতেছে। 

.

১১. স্ট্রেস / মেন্টাল হেলথ 

ক্যারিয়ার শুরুর দিকে অনেক স্ট্রেস ছিল। প্রথম এক দেড় বছর। ধীরে ধীরে আমি যখন কাজগুলো ধরে ফেলতে পারছি। প্রসেস ধরে ফেলতে পারছি তারপর থেকে আর স্ট্রেস তেমন হয় না। খুবই রিলাক্স মুডে চলতে থাকে। 


তবে কারো কারো বিশেষ করে জুনিয়রদের এইটা বেশি হয়। প্রজেক্ট ডেডলাইন নিয়ে ভালো প্যারা হয়। তাদেরকে বলবো কাজ করতে থাকো। এইগুলা লাইনে চলে আসবে।  

.

১২. ভিটামিন D এর ঘাটতি। 

এইটা আমার আছে। আমি ঘরকুনো ফার্মের মুরগি টাইপের। তাই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আছে। ডাক্তার বলেছে এইটা যদি আরো কমে তাহলে ট্যাবলেট দিবে। কমানোর জন্য মাঝে মধ্যে বাইরে হাঁটার চেষ্টা করি। কিছু মাছ আছে সেগুলা মাঝে মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করি। 


ডিসক্লেইমার: আমি কোন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ না। নিজে নিজে যেগুলা ভালো মনে হয় সেগুলা নিয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করি। কারো এই স্বাস্থ্য রিলেটেড সিরিয়াস ইস্যু হলে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপণ্য হওয়া উচিত।

Comments

Popular posts from this blog

LEDP CERTIFICATE APPLICATION --লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে শুরু হওয়া অনলাইনে প্রদত্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ কার্যক্রম

LEDP Course Certificate Download || এল ই ডি পি সার্টিফিকেট ডাউনলোড

Search Engine - List